শনিবার (৯ আগস্ট) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্তিফাদার প্রেসিডিয়াম সদস্য আসিফ আদনান অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পাঠ করা জুলাই ঘোষণাপত্র দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো বাদ দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা—যেমন ফকির মজনু শাহ, তিতুমীর, ফরায়েজি আন্দোলন ও জমিদারবিরোধী কৃষক প্রতিরোধ—উল্লেখ না করা জনগণের আত্মপরিচয়কে দুর্বল করে।
আদনান অভিযোগ করেন, ঘোষণাপত্রে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার উত্তরাধিকার ভাঙার প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষিত হয়েছে এবং ১৯৪৭ সালের মুসলিম রাজনৈতিক সংগ্রামের অবদান বাদ দিয়ে সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে “উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র” প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করাকে তিনি “চরম বিকৃতি” হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ ছিল ঈমান, ন্যায়বিচার ও মর্যাদার জন্য শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।
তিনি দাবি করেন, সংবিধান প্রণয়নে জনগণের অংশগ্রহণ বাদ দিয়ে এলিট ও সেক্যুলার এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা অংশগ্রহণবিহীন কাঠামো তৈরি করবে। এছাড়া, ৭ নভেম্বর ১৯৭৫-কে ‘বিপ্লব’ বলা ও ২০২৪ সালের জুলাইকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ হিসেবে খাটো করে দেখানো দলিলের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করেছে।
সংগঠনটি অভিযোগ করে, ঘোষণাপত্রে ভারতের বিভিন্ন বিতর্কিত ভূমিকা—যেমন পিলখানা হত্যাকাণ্ড, সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি আটকে রাখা, ভুয়া নির্বাচন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়—আড়াল করা হয়েছে। একইভাবে, র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, সিটিটিসি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট না করে কেবল ‘ফ্যাসিবাদী বাহিনী’ বলা অপরাধীদের দায় অস্পষ্ট করেছে।
আদনান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন—যেমন শাহবাগ, শাপলা চত্বর, কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক, মোদীবিরোধী প্রতিবাদ এবং ইসলামপন্থীদের ত্যাগ—উল্লেখ না করায় ঘোষণাপত্র জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ ও এনজিওর পরিভাষা ব্যবহার করে “পশ্চিমা উন্নয়ন এজেন্ডা” চাপানোর আশঙ্কাও তিনি ব্যক্ত করেন।
তিনি স্পষ্টভাবে জানান, জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ছাড়া বাকি সব প্রস্তাব বাতিল করে ঘোষণাপত্র পুনর্লিখন জরুরি। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের অন্যান্য প্রেসিডিয়াম সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।