ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা বন্ধ এবং দোষীদের আন্তর্জাতিক শাস্তির দাবিতে সিডনিতে আয়োজিত হলো অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে সাধারণ জনগণ নিজ উদ্যোগেই সিডনি হারবার ব্রিজ দখলে নেয়—এক নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে।
রোববার (৩ আগস্ট) সিডনির বিখ্যাত হারবার ব্রিজ জুড়ে তিন লাখ মানুষের মিছিল—অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে এত বড় বিক্ষোভ এর আগে দেখা যায়নি।
বিক্ষোভের আয়োজন করে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপ (PAG), যারা ২০২৪ সাল থেকে প্রতি রোববার হাইড পার্কে ফিলিস্তিনের পক্ষে সমাবেশ করে আসছে। এবার তারা ঘোষণা দেয় ৩ আগস্টের আয়োজন হবে সিডনির হারবার ব্রিজে।
অন্যদিকে নিউ সাউথ ওয়েলস (NSW) পুলিশ ও প্রিমিয়ার ক্রিস মিনস এতে বাধা দেয় এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ডানপন্থী রাজনীতিবিদ ও মিডিয়া এটিকে অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা ও ঐতিহ্যের প্রতি হুমকি হিসেবে প্রচার করে।
তবে PAG এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে, এবং বিচারপতি বেলিন্ডা রিগ রায়ে বলেন—“এটি জনগণের মত প্রকাশের অধিকার। নিষেধাজ্ঞা অবৈধ।”
এরপরই দুপুর ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বৃষ্টি ও ঠান্ডা উপেক্ষা করে সিডনির প্রতিটি কোণ থেকে শিশু, বৃদ্ধ, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের মানুষ ট্রেন, বাস ও হেঁটে জড়ো হন।
“From the river to the sea, Palestine will be free” —এই স্লোগানে মুখরিত হয় সিডনির প্রতিটি সড়ক।
দুপুরে পুলিশ জানায়—৯০ হাজারের বেশি মানুষ তখন ব্রিজের উপর, আর PAG দাবি করে তিন লাখ মানুষ অংশ নেয়। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, গ্রিনস পার্টির সিনেটর ডেভিড শুব্রিজ, অসংখ্য পেশাজীবী ও ধর্মীয় নেতা অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশ শেষে বিকেলে পুলিশ হেলিকপ্টার, ঘোড়ার পিঠে মোতায়েন সদস্য ও পদাতিক বাহিনীর সহায়তায় ধীরে ধীরে অংশগ্রহণকারীরা এলাকা ত্যাগ করে। কোনো সহিংসতা বা বড় বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
এই মিছিল শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়, বরং অস্ট্রেলিয়ার সরকার ও মিডিয়ার ফিলিস্তিন বিরোধী পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধেও একটি শক্ত বার্তা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গাত্মক পোস্টার, লেবার পার্টির সমালোচনা এবং ফিলিস্তিনের পতাকা—সবই ছিল প্রতিবাদের হাতিয়ার।
মন্তব্য করুন