এক বছর আগেও কলকাতার ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মারকুইস স্ট্রিট ছিল বাংলাদেশি পর্যটকদের মিলনমেলা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল ও অস্থিরতা এই প্রাণবন্ত এলাকাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আজও সেই ক্ষতি পূরণ হয়নি—ব্যবসা ধসে পড়েছে, থমকে গেছে হাজারো মানুষের জীবিকা।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কলকাতার 'মিনি বাংলাদেশ' হিসেবে খ্যাত ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও আশপাশের এলাকা পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। এখানকার হোটেল, রেস্তোরাঁ, মুদ্রা বিনিময়, চিকিৎসা, ভ্রমণ ও পরিবহনসেবা এক বছর ধরে চরম ক্ষতির মুখে রয়েছে।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের হায়দার আলি খান জানিয়েছেন, প্রতিদিন এখানে প্রায় ৩ কোটি টাকার লেনদেন হতো। অথচ এখন দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ—সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অনুমান করা হচ্ছে, মোট ক্ষতির পরিমাণ ১,০০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে। নিউ মার্কেট ও বড়বাজার মিলিয়ে ক্ষতি ৫,০০০ কোটিরও বেশি হতে পারে।
ভুক্তভোগীদের মতে, প্রায় ৪০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে, বহু হোটেল খালি পড়ে আছে। বড় রেস্তোরাঁগুলো লোকসান নিয়ে কোনোমতে টিকে আছে। মুদ্রা বিনিময়ের সঙ্গে যুক্তরা বলেছেন, বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
করোনার পরে যারা নতুন বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁরাও এখন ঋণের বোঝা বইছেন। কেউ গাড়ি কিনেছেন, কেউ দোকান সংস্কার করেছেন—সবই এখন অলাভজনক। রান্নাবান্না, ট্যুর গাইডিং, হোমস্টে, গাড়ি চালানোসহ পর্যটননির্ভর অনানুষ্ঠানিক খাতেরও অবস্থা শোচনীয়।
এলিয়ট রোডের ফারহান রাসুল বলেন, “মাসে মাত্র ৫-৬টি বুকিং পাই, তাও লোকাল কাস্টমার। ইএমআই চালিয়ে যাওয়া দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে।”
এই সংকট আরও কতদিন চলবে, তা কেউ জানে না। ব্যবসায়ীরা এখন শুধু অপেক্ষা করছেন—বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে হয়তো পুরনো ভিড় আবার ফিরবে কলকাতার এই বাণিজ্যচত্বরেও।
মন্তব্য করুন